সর্বশেষ খবর:
পাথরঘাটা মুরগি বিক্রি বন্ধ জামালপুরে ট্রেনে কাটা পরে গৃহবধূর মৃত্যু বলিউড অভিনেতা বরুণ ধাওয়ানের জন্মদিন আজ স্বপ্নের সোনালী ফসলে সেঁজেছে মাঠ, হাসি কৃষকের মুখে সুন্দরগঞ্জে কালবৈশাখী ঝড়ে বোরধানের ক্ষতি নড়াইলে বিএনপির দু’গ্রুপে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী কুখ্যাত ডাকাত শাহীন ও জুয়েল গ্রেফতার বাবার কোলে শিশু হত্যার মূল আসামি সহ গ্রেফতার ৫ ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সমর্থনে সোহরাওয়ার্দী কলেজ শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ আজ আওয়ামী যন্ত্রে পরিণত হয়েছে : ডা.শাহাদাত হোসেন প্রতিপক্ষের হামলায় বাবা-মা-ছেলে আহত গুরুদাসপুরে মাদকব্যবসার জের ধরে হত্যা, ২জন আটক উল্লাপাড়ায় বাসচাপায় অটোরিকশা যাত্রী নিহত ১ জবিতে র‍্যাগিং প্রমাণিত হলে ছাত্রত্ব বাতিল কোম্পানীগঞ্জ মুছাপুরে ভোগ দখলে আশ্রয় কেন্দ্র ইটভাটায় পুড়িয়ে হত্যা মামলায় ৫ জনের যাবজ্জীবন, ২ জন পলাতক ইটভাটা চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলা, ৫ জনের যাবজ্জীবন ৫’শ টাকার জন্য রাজু কে হত্যা দায়িত্বরত ট্রাফিক, টহল পুলিশদের ইফতার পাঠালেন মাশরাফী সাভারে খেলার মাঠে যুবকের মরদেহ উদ্ধার

মুক্তিপনের টাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা

উপজেলা প্রতিনিধি, পটুয়াখালী সদর

২০ এপ্রিল, ২০২২, ৩ years আগে, : 0

মুক্তিপনের টাকায় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি করার পরিকল্পনা
ব্যবসায়ী শিবুলাল দাসকে ড্রাইভারসহ অপহরন করে মুক্তিপনের  টাকায় দক্ষিণবঙ্গের বড় গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি দিতে চেয়েছিল পরিকল্পনাকারীরা। গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এমন স্বীকারোক্তি দিয়েছে অপহরনের মূল পরিকল্পনাকারী ল্যাংড়া মামুন মুফতি মামুন।
বুধবার (২০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় পটুয়াখালী জেলা পুলিশের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজে দেয়া একটি পোষ্টের মাধ্যমে এ তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
পটুয়াখালী জেলা পুলিশের রিকুইজিশনের প্রেক্ষিতে গত ১৯ এপ্রিল দুপুর থেকে  সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকার  মিরপুর, ভাটারা এবং গুলিস্তান এলাকায় ডিবি গুলশান বিভাগের একাধিক টিম ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ল্যাংড়া মামুনসহ ৪ জনকে  গ্রেফতার করেন।
গ্রেফতারকৃতরা হলো
  • ১. ল্যাংড়া মামুন মুফতি মামুন,
  • ২. পিচ্চি রানা, 
  • ৩.জসীমউদ্দীন এবং 
৪. আশিকুর রহমান।  এসময় অপহরনের কাজে ব্যাবহৃত প্রাইভেট কার সহ মোবাইল ফোন, গামছা এবং ৪০০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করে হয়েছে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরন করা হয়েছে। 
পটুয়াখালী সদর থানার ওসি মোঃ মনিরুজ্জামান জানান, বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে আসামিদেরকে পটুয়াখালী  পুলিশ রিমান্ডে এনে জড়িত অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতার, সকল রহস্য উদঘাটন এবং তাদের অপরাধের ইতিহাস সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা অব্যাহত থাকবে।

অপহরনের পরিকল্পনা:

গত ফেব্রুয়ারি মাসে এই অপহরনের পরিকল্পনা করা হয়  পটুয়াখালী লঞ্চঘাটের কাছাকাছি ল্যাংড়া মামুনের গার্মেন্টস অফিসে। তাতে অংশ নেয় ল্যাংড়া মামুন, পিচ্চি রানা,  পাভেল ও বিআরটিসির ড্রাইভার জসিম।
পরে একাধিক মিটিং ও অপারেশনাল পরিকল্পনা করা হয়। মিটিংয়ে ঢাকা থেকে মাঝে মাঝে ছুটি নিয়ে যোগ দেয় জসিম উদ্দিন মৃধা এবং তার ভাই গাড়ির দালাল  আশিক মৃধা। ১০০০০ টাকা এডভান্স দিয়ে এক সপ্তাহের জন্য গাড়ি ভাড়া করা হয় ঢাকা থেকে।
সেই গাড়ি ঢাকা থেকে পটুয়াখালী আসে। অপহরণের পর মুক্তিপণ দাবি, নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ইত্যাদি  অপারেশনাল কাজে ব্যবহার করার জন্য ঢাকার সাভার থেকে কেনা হয় পাঁচটি বাটন ফোন। বেশি দাম দিয়ে অন্যজনের  নামে নিবন্ধনকৃত সিম কেনা হয় জেলা সদর থেকে।
স্থানীয়ভাবে সংগ্রহ করা হয় একটি খেলনা পিস্তল, দুইটি সুইচ গিয়ার, তিনটি চাপাতি এবং গরু জবাই করার একটি বড় ছুরি। পরে একাধিক দিন রেকি করে ফিল্মি স্টাইলে রোমহর্ষক অপারেশন চালানো হয় ১১ এপ্রিল রাত সাড়ে আটটায়।  

অপহরণের বিবরন:  

১১ এপ্রির দুপুরবেলা পটুয়াখালী এয়ারপোর্টের কাছে মিলিত হয় অপহরণকারীরা। কার কোথায় কি দায়িত্ব তা  নির্ধারণ করে দেয় ল্যাংড়া মামুন এবং পিচ্চি রানা। ভিকটিমদের গতিবিধি মোবাইলে জানানোর জন্য পিচ্চি রানা  তাঁর মোটরসাইকেলে ল্যাংড়া মামুনকে  নিয়ে চলে যায় গলাচিপা ঘাটে।
সন্ধ্যা সাতটার দিকে ব্যারিকেড দেয়ার জন্য পটুয়াখালী-গলাচিপা আঞ্চলিক মহাসড়কের শাঁখারিয়ার নির্জন জায়গায় একটি প্রাইভেট কার  এবং একটি ট্রলি নিয়ে অবস্থান নেয় ৫ জন। ল্যাংড়া মামুনের নির্দেশে পূর্বেই একটি ট্রাক্টর ভাড়া করে ড্রাইভার বিল্লাল।  ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া প্রাইভেটকারটি নিয়ে ড্রাইভার আশিক মৃধা, পাভেল, হাবিব, সোহাগ এই চারজন অবস্থান নেয়। ল্যাংড়া মামুনের সংকেত পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে আটটার দিকে  ড্রাইভার বিল্লাল ট্রলিটি নিয়ে সুকৌশলে ভিকটিম শিবু দাসের প্রাডো জিপের  সামনে আড়াআড়ি করে অবস্থান নেয়।
পিছন থেকে অনুসরণ করতে থাকা ড্রাইভার আশিক তার প্রাইভেট গাড়িটি দিয়ে  ভিকটিমের গাড়ির পিছনে  অবস্থান নিয়ে অবরুদ্ধ করে ফেলে । ট্রাক্টর এবং প্রাইভেটকার থেকে অপহরণকারীরা হুড়মুড় করে মুহূর্তেই উঠে যায় ভিকটিমের প্রাডো জীপে। আশিক প্রাইভেটকার ছেড়ে শিবু দাসের গাড়ির  নিয়ন্ত্রণ নেয়।
গাড়িতে উঠেই বিল্লাল ,পাভেল, সোহাগ ,আশিক  বেঁধে ফেলে ভিকটিমদ্বয়কে। গামছা, টিস্যু পেপার এবং  স্কচ টেপ দিয়ে মুখ, হাত-পা বেঁধে চলতে থাকে চড়-থাপ্পড় কিল ঘুষি। সঙ্গে থাকা খেলনা পিস্তল ও ছোরা- চাকু দিয়ে ভয় দেখানো চলতে থাকে। বরগুনার আমতলী এলাকার গাজিপুরায় গিয়ে ভিকটিমের জিপ গাড়ি থেকে তাদেরকে তোলা হয় ঢাকা থেকে নিয়ে যাওয়া কারটিতে।‌
সেখানে ভিকটিম দুইজনকে আরো ভালোভাবে বেঁধে প্লাস্টিকের বস্তায় ঢুকানো হয়। পুরিমকে ধোঁকা দিতে ভিকটিমের জীপটিকে আমতলীর একটি ফিলিং স্টেশনে ফেলে আসে তারা। রাত আনুমানিক সাড়ে এগারোটার দিকে ল্যাংড়া মামুন  ও পিচ্চি রানা পটুয়াখালীর বাঁধঘাট এলাকায় ভিকটিমদের বহনকারী গাড়ি বুঝে নেয়। গাড়ি চালাতে থাকে ল্যাংড়া মামুন নিজেই।
গাড়ি নিয়ে যাওয়া হয় শহরের  এসডিও রোডস্থ মামুনের মেশিনঘর কাম  টর্চার সেলে। সেখানে সারা রাত রেখে নির্যাতন চালায়।পরের দিন আরো ভালো করে হাত মুখ পা বেধে বস্তায় ভরে অন্যান্য আরো মালামালের বস্তার সহ অটোরিক্সায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় শহরের কাজী পাড়াস্থ এসপি কমপ্লেক্স সুপার মার্কেটের আন্ডারগ্রাউন্ডে।
উল্লেখ্য যে অপহরণের দিন রাত পৌনে দুইটায়  রানার নির্দেশমতো বিল্লাল ভিকটিমের সিম থেকে ভিকটিমের স্ত্রীকে  ফোন দিয়ে পরের দিন দুপুর দুই টার মধ্যে  ২০ কোটি টাকা মুক্তিপণ দিতে বলে। মুক্তিপণের টাকা না দিলে এবং বিষয়টি পুলিশকে জানালে শিবু লালকে হত্যা করে সাগরে ভাসিয়ে দেয়া হবে বলেও সতর্ক করে দেয় অপহরণকারীরা।

ভিকটিম উদ্ধার

পরের দিন ১২ এপ্রিল রাত সাড়ে দশটায় অপহরনের ২৬ ঘণ্টা পরে হাত-পা এবং মুখ বাঁধা বস্তাবন্দি মুমূর্ষ অবস্থায় ভিকটিমদেরকে এসপি কমপ্লেক্স শপিং সেন্টারের আন্ডার গ্রাউন্ড থেকে উদ্ধার করে পটুয়াখালী জেলা পুলিশ। তাৎক্ষণিকভাবে চোখ- মুখ, হাত-পা খুলে দিয়ে চিকিৎসার জন্য তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করে জেলা পুলিশ।
আসামিদের বিরুদ্ধে মারামারি, মাদক এবং অপহরণের একাধিক মামলা রয়েছে। ল্যাংড়া মামুন ঢাকার কুক্যাত সন্ত্রাসী পিচ্চি হান্নানের সহযোগী ছিলেন বলে জানা গেছে। অপহরণ বাণিজ্য চালানোর জন্য পটুয়াখালীতে সে গড়ে তুলেছিল টর্চার সেল। সে একজন মাদক সেবী, মাদক ব্যবসায়ী।  তার কৃত্রিম পায়ের ফোকরে অনায়াসে হাজার হাজার পিস ইয়াবা বহন করে নিয়ে যেতে পারত।